বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম সিটি মেয়র ঘোষণার দাবিতে বরিশাল জেলা ও দায়রা আদালতের প্রধান গেটের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এদিকে ২০২৩ সালের ১২ জুনের সিটি নির্বাচন বাতিল করে জাতীয় পার্টির প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপসকে মেয়র ঘোষণার দাবিতে মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। এরপর ফয়জুল করিমকে মেয়র ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের দাবি, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে মেয়র ঘোষণা করা হয়। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ফয়জুল করিম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন দাবি করে তাকে মেয়র ঘোষণার আহ্বান জানান। অন্যথায় তারা গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে কোনোভাবেই সরে যাবেন না বলে ঘোষণা দেন।
আদালতের শুনানি শেষে গণঅবস্থান প্রাঙ্গণে এসে বাদীর আইনজীবী শেখ আব্দুল্লাহ নাসির নেতাকর্মী ও গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাতপাখা প্রার্থীর পক্ষে ভোট পড়ছে বুঝতে পেরে তার বাদীকে হত্যার উদ্দেশে রক্তাক্ত করা হয়। এমনকি বেলা ১২টার পর সব কেন্দ্র আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দখল করে নেয়। পরে আবুল খায়েরকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী দেখানো হয়। ওই সময় বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণে ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের। এ কারণে তারা বিচার বিভাগের কাছে যেতে পারেই। বর্তমানে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ায় তারা আদালতে মামলা করেছেন। সেখানে আজ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আগামী ৫ মে পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। তিনি আশাবাদী তাদের পক্ষে রায় দেবেন বিচারক।এর পূর্বে নগরীর সদর রোডের টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে দলটির নেতাকর্মীরা। এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে অবস্থান নেন।
অপরদিকে, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস। বুধবার দুপুরে বরিশাল সিনিয়র সহকারী জজ এবং নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল এ মামলা করেন। আদালতের বিচারক মামলাটি পরে আদেশের জন্য রেখে দেন।বাদীর আইনজীবী আজাদ রহমান বলেন, ২০২৩ সালের বিসিসি নির্বাচন বাতিল করে ইঞ্জিনিয়ার তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তাপসের নিশ্চিত জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাই ২০২৩ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে তিনি আগেভাগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে সরাসরি কাজ করেন বলে অভিযোগ করা হয়।
এ ছাড়া ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ফলাফল পরিবর্তন, বহিরাগতদের এনে কেন্দ্র দখল, প্রার্থীর ওপর হামলা, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং নির্বাচনের দিন ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনকি ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতির হার ২০-২৫ শতাংশ হলেও ফলাফলে অতিরিক্ত ভোট দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রার্থী তাপস।মামলায় বলা হয়, ভোটাররা সঠিকভাবে ভোট দিতে পারলে ইকবাল হোসেন তাপসই বিজয়ী হতেন বলে তিনি দাবি করেছেন।
নির্বাচনে ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে মেয়র ঘোষণা করা হয়। ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট পেয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হাতপাখা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। ওই দিন দুপুরে ফয়জুলের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। ভোটে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর অবস্থান ছিলেন তৃতীয় নম্বরে। তিনি ভোট পেয়েছিলেন ছয় হাজার। তিনি জামানত হারিয়েছিলেন।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন